রাম: অটুট অঙ্গীকার ও চরিত্রের চিরন্তন আদর্শ
- H.H. Raseshwari Devi Ji
- Apr 7
- 2 min read

আজকের পৃথিবীতে, যেখানে সম্পর্কগুলি ক্ষণস্থায়ী এবং অঙ্গীকার বিরল, সেখানে ভগবান রামের জীবন বিশ্বস্ততা, শালীনতা এবং ত্যাগের এক উজ্জ্বল মশালস্বরূপ। সীতা দেবীর প্রতি তাঁর প্রেম শুধুই এক আবেগময় সম্পর্ক নয়, বরং ভক্তি ও ধর্মের এক আদর্শ। যখন রাবণ সীতাকে অপহরণ করেছিল, তখন রামচন্দ্র পর্বত, বন এবং সমুদ্র পেরিয়ে যুদ্ধ করে তাঁকে সম্মানসহ ফিরিয়ে আনেন। তাঁর অঙ্গীকার এত গভীর ছিল যে সমাজের চাপে গর্ভবতী সীতাকে বনবাসে পাঠাতে হলেও, তিনি আর কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি, হৃদয় থেকে কখনও তাঁকে আলাদা করেননি।
যজ্ঞে যেখানে স্ত্রীর উপস্থিতি আবশ্যক, সেখানে রামচন্দ্র সীতার স্বর্ণমূর্তি পাশে স্থাপন করেন। বনবাসে স্বল্পমেয়াদি পুনর্মিলনের সময় সীতা এটি দেখে বুঝতে পারেন—রাজা হয়তো রাণী থেকে বিচ্ছিন্ন হন, কিন্তু রাম কখনও সীতা থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। যখন সীতা ধরাধামে বিলীন হলেন, তখনও রামচন্দ্র তাঁকে স্বয়ং নিজেকে পূর্বে সাকেতলোকে সিংহাসনে স্থাপন করেন। রামচন্দ্র কখনও তাঁর মর্যাদাকে অস্বীকার করেননি। লব-কুশকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। তাঁর প্রেম জাগতিক সীমার ঊর্ধ্বে ছিল—বিশুদ্ধ, ধৈর্যশীল এবং চিরন্তন।
এই দয়া ও ধর্মনিষ্ঠা তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিফলিত হয়। তিনি অহল্যাকে মুক্তি দেন, কেবটকে সম্মান দেন, সুগ্রীবকে সুরক্ষা দেন, বিভীষণকে ন্যায় বিচার দেন এবং এমনকি এক পাপীকেও, যিনি সীতার অবমাননা করেছিলেন, তাঁর জন্যও এক স্বতন্ত্র লোকের সৃষ্টি করেন। কাউকেই সাকেতলোক থেকে বঞ্চিত করেননি—এমনকি সেই পাপীকেও নয়। রাবণও মৃত্যুর সময় রামের মহত্ত্ব স্বীকার করে বলেন—"যতক্ষণ আমি জীবিত ছিলাম, তুমি লঙ্কায় প্রবেশ করতে পারোনি, আর আমি যখন চলে যাব, তখন তোমার আগেই সাকেতলোকে পৌঁছে যাব।"
রামচন্দ্র শুধুমাত্র একজন রাজা নন। একজন আদর্শ পুত্র হিসেবে তিনি নির্বাকভাবে বনবাস গ্রহণ করেন, ভাই হিসেবে ভরতকে রাজসিংহাসনে দেখে আনন্দিত হন, স্বামী হিসেবে তিনি চিরকাল বিশ্বস্ত ছিলেন এবং একজন যোদ্ধা হিসেবে তিনি প্রতিশোধ নয়, ধর্মের জন্য যুদ্ধ করেন। আজ হয়তো আমরা রামের মতো রাজা, ভরতের মতো ভাই, বা সীতা-রামের মতো প্রেম না-ই খুঁজে পাই—কিন্তু আমরা আমাদের জীবনে রামের গুণাবলীর সুগন্ধ ছড়াতে পারি। জীবন যেখানেই আমাদের রাখুক, আমাদের চরিত্র থেকে যেন কষ্টে উদ্দেশ্য ও কর্তব্যে ভক্তির প্রকাশ ঘটে।
রাধে রাধে।
Comments